টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে জুমার নামাজ আদায় হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসুল্লি। ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমায় শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে পৌনে ২টার দিকে জুমার নামাজ শুরু হয়। ইজতেমা ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। ইমামতি করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।

ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমার পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন পাটি, চটের বস্তা ও খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হন।

 টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লির জুমা আদায়

জুমার নামাজে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও গাজীপুর ২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ হাসান রাসেল।এর আগে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। দেশের ১৬ জেলা থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথে মুসল্লিদের কাফেলা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসে। গেলো বুধবার থেকে আসতে থাকা মুসল্লিদের ঢল শুক্রবার জুমার নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের খোলা স্থান, রাস্তা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ইজতেমার মূল প্যান্ডেলের ভেতরে এবার ১৬টি জেলার ২৯টি খিত্তা থাকায় জেলাওয়ারি মুসল্লিরা অনেক জায়গা পেয়েছেন।

ফলে মূল প্যান্ডেলে ভিড় আগের তুলনায় এবার অনেকটাই কম। শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি জর্ডানের মাওলানা মোহাম্মাদ সৌয়দ ওমর ফারুক উর্দুতে আমবয়ান করেন। আর বাংলায় তরজমা করেন কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মো. আব্দুল মতিন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির-আসকার-ইবাদত বন্দেগিতে টঙ্গী এখন পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আজ ইজতেমার ময়দানে আনুমানিক ৫ লাখ মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করেন।

বিশ্ব ইজতমোয় ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি, ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে তা অনুবাদ করা হয়। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা তাঁবুতে বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ করে শোনান। বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানো, নতুন জামাত তৈরি।

ভিআইপিদের জুমার নামাজে অংশগ্রহণ: ইজতেমার ময়দানে জুমার নামাজ আদায় করেছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকটে আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ডা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান প্রমুখ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত: ইজতেমা ময়দানের প্রথম দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১০টি অভিযান পরিচালনা করে অর্ধলক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ইজতেমাস্থলের আশপাশে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন দোকানে খাবারের মান ও মেয়াদ যাচাইয়ে এসব অভিযান পরিচালিত হয়। কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব অভিযান পরিচালনা করছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবার দুপুরে ইজতেমায় স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ জানান, দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তাঘাট, ব্যস্ততম এলাকাসহ পুরো ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। পাঁচ স্তরে পুরো ইজতেমা ময়দানকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে।

বিদেশি মুসল্লি: পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে, এই বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিন আমেরিকা, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, আফ্রিকা, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৭৯টি দেশের প্রায় ৩৯১৯ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।

ইজতেমায় স্বাস্থ্যসেবা: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়, টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ্ মাস্টার সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পাশে নিউ মন্নু কটন মিলের ভেতরে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইজতেমা ময়দানে হামদর্দ, ইবনে সিনা, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতি, আবেদা মেমোরিয়াল প্রাইভেট হাসপাতাল লিমিটেড, সি কে ডি অ্যান্ড ইউরোলজিস্ট হসপিটাল, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, ইসলামি ফাউন্ডেশন, নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদফতর চিকিৎসা কেন্দ্র, গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ ৫০ ফ্রি মেডিকেল টিম বিশ্ব মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার জন্য ক্যাম্প খুলেছে।

একশ হকার আটক: ইজতেমা ময়দানের আশপাশ থেকে ১০০ জন হকারকে আটক করা হয়েছে। ময়দানের আশপাশে বসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী বিক্রির অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।

ইজতেমায় ২ মুসল্লির মৃত্যু: টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমায় আসা দুই মুসল্লি নিহত হয়েছেন। একজন গাড়িচাপায় আর একজন শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় আব্দুল মামুন ওরফে মনা (৩৩) নামের এক ব্যক্তি রাস্তা পার হচ্ছিলেন।“তিনি ইজতেমায় যোগ দিতে আসছিলেন। গাড়িচাপায় ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।” নিহত মামুন ঢাকার পশ্চিম আগারগাঁও এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলীর ছেলে।

এছাড়া আজিজুল হক (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে মাসলেহাল জামাতের সদস্য মো. আদম আলী জানিয়েছেন।“আজিজুল শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তিনি মারা যান।” তার বাড়ি মাগুড়ার শালিখা থানার হবিশপুর গ্রামে। ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। টঙ্গী থানার এএসআই মো. আলমগীর নাজির তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment